KAROTAL O HATER PRAKARVED -SHESH PARBO

                        করতল ও হাতের প্রকারভেদ - শেষ পর্ব 

ভারতীয় জ্যোতিষ চর্চায় জাতক-জাতিকার করতল এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। করতল কোন জাতক-জাতিকার অনেক কিছু জানান দেয়। কোন জাতক বা জাতিকা মানুষ হিসাবে কেমন হবেন তার স্বভাব , প্রকৃতি কেমন হবে , তার ভবিষ্যত কেমন হতে পারে তার একটা আভাস আমরা করতলের মাধ্যমে পেতে পারি।

  আর ভারতীয় জ্যোতিষ বিচার অনুসারে প্রধান প্রধান গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী মানুষের হাতের প্রকারভেদ করা হয়েছে। সেইমতো আগের পোস্টে আমরা তিন প্রকার হাতের সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তা হল রবি প্রধান হাত , চন্দ্র প্রধান হাত এবং মঙ্গল প্রধান হাত সম্পর্কে। আজ এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো বুধ প্রধান হাত , বৃহস্পতি প্রধান হাত ,শুক্র প্রধান হাত এবং শনি প্রধান হাত সম্পর্কে।

বুধ প্রধান হাত : 
জাতক বা জাতিকার কনিষ্ঠা আঙুলের ঠিক নিচে , অর্থাৎ যেখান থেকে কনিষ্ঠা আঙুলের কর শুরু হয়েছে তার ঠিক নিচের অবস্থান হল বুধ গ্রহের অবস্থান।

 এই অঞ্চলটি যদি কোন জাতক -জাতিকার বেশ পুষ্ট ও উন্নত হয় তবে সেই জাতক-জাতিকার হাতকে বুধ প্রধান হাত বলা হবে। এখন প্রশ্ন উঠবে আপনি বুঝবেন কি করে যে আপনার হাতটি বুধ প্রধান হাত কিনা। 

আপনাকে দেখতে হবে আপনার হাতের অন্যান্য গ্রহের অবস্থান অনুসারে তুলনামূলকভাবে ওই অঞ্চলটি  বিশেষ পুষ্ট বা উন্নত কিনা।

আয়ু রেখা থেকে একটি রেখা যদি আড়াআড়ি ভাবে বুধের ক্ষেত্রে পৌঁছায় ,যেটি বুধ রেখা নামে বিশেষ পরিচিত তাহলে বলা হয় সেই জাতক বা জাতিকা বিশেষ সৌভাগ্যবান বা সৌভাগ্যবতী হন।

স্বভাব : 

এরা বেশ চঞ্চল প্রকৃতির হন। এদের মন বেশ উদার প্রকৃতিরও  হয়ে থাকে। এদের চঞ্চলতার মূল কারণ এরা মূলত কল্পনার জগতে অনেক সময় কাটান। আকাশ কুসুম চিন্তার কারণে এরা এই মুহূর্তে এক ভেবে কাজ করেন তো পরমুহূর্তে আর এক ভাবনা এসে হাজির হয়। তার ফলে মনের অস্থিরতা এদের মতো মানুষদেরকে তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে।

মেধা : 

এরা প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি হন।  এদের উপস্থিত বুদ্ধি , স্মরণ রাখার ক্ষমতা প্রবল। ছাত্রজীবনে অল্প মনোসংযোগেই এদের পাঠ তৈরী হয়ে যায়। এরা উচ্চতর বিদ্যার্জনের উপযোগী হয়ে ওঠেন।

ভবিষ্যৎ :

এরা সকলের সাথে যে কোন পরিবেশে মেলামেশায় পারদর্শী হওয়ার কারণে জনসংযোগ রাখতে হয় এমন কাজে এদের জুড়ি মেলা ভার। তাই বীমা বা সঞ্চয়ী ব্যবসায় এরা সহজেই সাফল্য লাভ করে থাকেন। এই বুধ প্রধান হাতের নারীগণ সংসারে সকলের সাথে মানিয়ে নিতে পারেন। রাজনীতি  ও কূটনীতিতে এরা অন্যান্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকেন। খেলাধুলা , বিজ্ঞান ,সঙ্গীত ,অভিনয় , আইন বিষয়ে এরা সাফল্যলাভ করেন। তবে চাকুরীর চেয়ে ব্যবসায় এরা বেশি সফল হন।

বৃহস্পতি প্রধান হাত :

তর্জনীর ঠিক নিচে অবস্থান বৃহস্পতি গ্রহের। যে সকল জাতক -জাতিকার হাতের অন্যান্য গ্রহের অবস্থানের চেয়ে বৃহস্পতির অবস্থান বেশ উন্নত , তাদের হাতকে বলা হবে বৃহস্পতি প্রধান হাত। গ্রহরাজ বৃহস্পতি উন্নত হওয়ার কারণে বৃহস্পতি প্রধান হাতের ব্যক্তিগণ এর বৃহস্পতি ক্ষেত্রে বেশ পুষ্ট হয়।

স্বভাব : 

বৃহস্পতি প্রধান হাতের জাতক-জাতিকগণ নেতৃত্ব দিতে  ও কতৃত্ব করতে পারেন। এরা অতি সহজেই অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এরা অনেক উচ্চ আদর্শের মানুষ হন। এদের উচ্চাকাঙ্খা প্রবল থাকে। জীবনে নিজেকে দেশের মধ্যে একজন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। 

কোন কিছুর বিনিময়ে এরা নিজের আদর্শকে জলাঞ্জলি দেন না। এদের ব্যক্তিত্ব চোখে পড়ার মতো হয়। এরা ধর্মে বিশ্বাস করেন। সৎভাবে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা এরা করে থাকেন। এরা ধীর ও শান্ত প্রকৃতির হন। এরা যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য পেশ করতে পারেন। এদের বাচন ভঙ্গি সাহিত্যরসে ভরপুর হয়।

বৃহস্পতি প্রধান হাতের অধিকারীগণ সুবক্তা হন। সাহিত্যে এদের পারদর্শীতা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এরা ধর্মযাজক ও পন্ডিত  প্রকৃতির হন। নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের হাতের অধিকারীগণ একটু অহংকারী হন।

ভবিষ্যৎ :

বৃহস্পতি প্রধান হাতের অধিকারী হওয়ার কারণে এদের উপর বৃহস্পতি গ্রহের প্রভাব সবসময় থাকে।  কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে এদের যথেষ্ট দখল থাকে। সাহিত্যচর্চা ,রাজনীতি, ওকালতি এবং জনসংযোগের কাজে এরা সাফল্য লাভ করেন। 

এদের গুপ্ত শত্রূ থাকে। আর্থিক ভাব ভালো থাকায় এদের বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। চাকুরী ও ব্যবসা দুটি ক্ষেত্রেই এরা সাফল্যলাভ করেন।

এবার আসা যাক শুক্র প্রধান হাতের আলোচনায়। 

শুক্র প্রধান হাত : 

শুক্র প্রধান হাত বলতে আমরা সেই সকল হাত কে বেছে নেবো যাদের হাতের শুক্র অঞ্চলটি বেশ উন্নত ও পুষ্ট প্রকৃতির। শুক্র স্থান হল বৃদ্ধাঙ্গুলের ঠিক নীচের অবস্থান।

স্বভাব : 

শুক্র প্রধান হাতের অধিকারী জাতক -জাতিকাগন  বেশ সৌন্দর্য্যপ্রিয় হন। এরা প্রেমে বিশেষভাবে উৎসাহী হয়ে থাকেন। সবসময় আনন্দে মেতে থাকেন। ভোগ বিলাস , দেশ -বিদেশ ভ্ৰমণ ,রুচিশীল খাবার গ্রহণ , আধুনিক পোশাক আশাক ব্যবহার এদের পছন্দ। এরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায়।

 এরা খানিক স্বার্থপর প্রকৃতির হন। এদের আচরণ বেশ মিষ্টি। এদের চোখ মুখ একসাথে চলে। এই ধরনের হাতের জাতিকাগন কামুক প্রকৃতির হয়ে থাকেন।  একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়তে পারেন এরা। এরা সর্বদা সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। তবে সাংসারিক জীবনে অনেক সময় এরা তৃতীয় ব্যক্তির ঝামেলায় পড়ে যান। অনেকে এদের সরলতার সুযোগ নেন।

ভবিষ্যৎ : 

শুক্র প্রধান হাতের অধিকারী ব্যক্তিগণ সংগীতে ,অঙ্কনে প্রযুক্তিগত কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায় সহজে খ্যাতি অর্জন করতে পারেন। ইলেকট্রিক , ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে এদের আগ্রহ বেশি থাকে।

  এরা কোন বীমা কোম্পানীর কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।এদের চাকুরী ও ব্যবসা দুটোই হতে পারে।  এরা খানিক ঘরকুনো প্রকৃতির হলেও কার্যক্ষেত্রে এরা বেশ পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন। হাতের শুক্র অবস্থানে একাধিক সূক্ষ্ম জালক জাতক -জাতিকার জীবনে মামলা মোকদ্দমার প্রভাব এর ইঙ্গিত দেয়।

শনি প্রধান হাত :

 জাতক -জাতিকাগনের মধ্যে যদি দেখা যায় কারো মধ্যমা আঙুলের ঠিক নীচের অংশ বেশ পুষ্ট অর্থাৎ উন্নত হয় তখন আমরা ওই ধরনের হাতকে মোটামুটিভাবে শনি প্রধান হাত বলতে পারি।

 যদি ভাগ্যরেখা সরাসরি শনির স্থানে এসে মেশে তবে তাদের চাকুরী বা ব্যবসায় অভূতপূর্ব উন্নতি দেখা যায়। এবার আসা যাক এরা কেমন প্রকৃতির হন সেই বিষয়ে।

স্বভাব : 

শনি প্রধান হাতের জাতক -জাতিকাগণ একটু নির্জনে থাকা পছন্দ করেন। এরা একটু চাপা স্বভাবের হন। আধ্যাত্মিকতায় এরা  প্রবলভাবে বিশ্বাসী হন। ভোগ -বিলাসে এরা খুব একটা পছন্দ করেন না। 

এরা দান ,ধ্যান ,পূজা ,সেবা করতে ভালোবাসেন। অন্যায়কে এরা একদম প্রশ্রয় দেন না। নারীদের কে এরা সম্মানের চোখে দেখেন। পিত-মাতার প্রতি এদের অগাধ আস্থা থাকে।

ভবিষ্যৎ : 

শনি প্রধান হাতের ব্যক্তিগণ কর্মঠ হন। ব্যবসায় এদের সম্ভাবনা বেশি থাকে।  প্রথম জীবনে কষ্ট পেলেও এরা বেশি বয়সে সুখ-শান্তি অর্জন করে।